সৌদি ফেরত নারীরা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে হাজির হয়েছিলেন সৌদি ফেরত নির্মম নির্যাতনের শিকার ২২ নারী।
দুই সন্তানের জননী শান্তা আক্তার (ছদ্মনাম)। দালালের মাধ্যমে এক বছর আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে এক গৃহে কাজ করতে দেয়া হয়। গৃহকর্তা নির্মম নির্যাতন করত। ভালো কোনো খাবার দেয়া হতো না। কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে নির্মম নির্যাতন করা হতো।
তিন মাস এভাবেই চলে। শান্তা পরিবারকে বিষয়টি জানালে এক দালাল এসে শান্তাকে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপর তাকে আরও এক দফা বিক্রি করা হয়। দেশে পাঠানোর নাম করে পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকাও আদায় করে দালাল চক্র।
কিন্তু তাকে আর দেশে পাঠানো হয়নি। পরে তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় দেশে ফেরেন। শুধু শান্তাই নয়, সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে হাজির হয়েছিলেন এমন ২২ নারী।
ওই অনুষ্ঠানে ২২ নারীর প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে চেক ও ঈদ উপহার প্রদান করেছে ব্র্যাক ও লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইবি)। অনুষ্ঠানে শান্তার মতো আরও চার নারী তাদের নির্মম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
এ সময় তিনজন তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, বিদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরার পর তাদের স্বামীরা তাদের গ্রহণ করছেন না। কেউ কেউ অন্যত্র বিয়ে করছেন। শিশু সন্তানদের নিয়ে তারা পথে বসেছেন। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ও এলএফএমইএবি বিদেশ ফেরত ৫০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি প্রদান করবে বলে নিশ্চয়তা দেয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নারী গৃহকর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঠাতে হবে।
নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের কোনো উন্নয়নই স্বার্থক হবে না। প্রবাসে নারীরা বিপদে পড়লে তাদের সহায়তায় সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
নারীরা বিদেশে গেলে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নারীরা বিদেশ গিয়ে কেন ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। একজন নারী সৌদিতে গেলে দেশে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। বিদেশে গৃহকর্মীরা তো নিরাপদ নয়।
অনেককে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হচ্ছে। তারপরও আমরা এটাতে কেন উদ্বুদ্ধ করছি। যাদের ঘামে আমাদের আজকের অবস্থান তাদের অবহেলা করলে আমরা কার কাছে যাব, কাদের কাছে জবাবদিহি করব? আমরা শুধু কয়েকটা টাকার জন্য নারীদের বিদেশ পাঠাচ্ছি।
যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা মানুষকে বিষয়গুলো জানাবেন। যাতে মানুষ নির্যাতনের ব্যাপারে জানতে পারে, সচেতন হতে পারে। অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, এই নারীগুলো যখন বিদেশ গিয়েছিল রাষ্ট্র তখন স্বাগত জানিয়েছিল।
কিন্তু যখন তারা ফেরত এলো আর কোনো খোঁজখবর রাখেনি।এজন্য তাদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে।
ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোরশেদ বলেন, আজকে যারা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন তাদের সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এলএফএমইবি’র সায়ফুল ইসলাম বলেন, আমাদের আর কোনো নারী সৌদিতে গৃহকর্মী হিসেবে যাবে না। আমরা সেই ব্যবস্থা করব। আমরা ব্র্যাকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। চুক্তির অধীনে ৫০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেব। এই
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৫ নারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩১ জন সৌদি আরবে গেছেন।