শৈলকুপায় মরে যাচ্ছে শতশত বিঘা জমির পেঁয়াজ
পেঁয়াজ চাষী ইসলাম সর্দ্দার। প্রতিবছরের মত এবারও লাগিয়েছেন পেঁয়াজ। তবে এবারের অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন। পেঁয়াজ লাগাতে এনজিও থেকে নিয়েছেন লোন, বিক্রি করেছেন গোয়ালের গরু, রেখেছেন জমি বন্দক। যার সমস্ত টাকা দিয়ে কিনেছেন লাল তীর কিং নামে পেঁয়াজের বীজ। ১০ কেজি বীজ কিনতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সবই ঠিক ছিল। বীজ থেকে চারা হওয়ার পর তা লাগিয়েছিলেন জমিতে। তবে বিধি বাম। সপ্তাহ যেতে না যেতেই পেঁয়াজের গোড়ায় শেকড় না গজানো ও মাথা শুকিয়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে পেঁয়াজ গাছ। এমন অবস্থার পর বুঝতে পারলেন এটা লাল তীর কিং বীজ না। ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে ভারতীয় চারা, লাল তীর কিং ভেবে লাগিয়েছেন। এমন অবস্থা শুধু ইসলাম সর্দ্দারেরই না। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা জুড়ে থাকা প্রায় ৫শতাধিক পেঁয়াজ চাষীর অবস্থা এমন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ কিনেই তাঁরা মহা বিপাকে পড়েছেন। এতে চাষিদের বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে। তবে কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় মরে যাচ্ছে পেয়াঁজ। শৈলকুপা উপজেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাষের সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে চারা তৈরি করে চাষ সম্ভব নয়। এঘটনার পর থেকে প্রতারক বীজ ব্যসায়ীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলার ধলহরাচন্দ্র, পাইকেনপাড়া, ধাওড়া, শিতালী, চরধলহরা, পাইকপাড়া, সাধুহাটি, মালিথীয়া সহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, জমিতে পেঁয়াজের চারা মরে মাটির সঙ্গে মিশে আছে। কোনো কোনো খেতের পেঁয়াজের চারায় শেকড় গজায় নি। যেখানে পেঁয়াজ লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের চারা সোজা হয়ে ওঠার কথা। সেখানে শেকড় না গজানোয় চারা সোজা হতে না পেরে লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। উপজেলার চরমালিথীয়া গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, ৯০ শতক জমিতে লাল তীর ভেবে করে প্রতি কেজি পাঁচ হাজার টাকা দরে ২ কেজি পেঁয়াজ বীজ কিনে বপন করি। চারা একটু বড় হলে সেগুলো মাঠে লাগানোর কিছুদিনের মাথায় লাল হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন মনে হচ্ছে এগুলো লাল তীর কিং বীজ না। প্রতারক ব্যবসায়ীরা এগুলো লাল তীর কিং বীজ বলে বিক্রি করেছেন। আসলে এগুলো ভারতীয় বীজ। পাইকপাড়া গ্রামের চাষী রেজাউল ইসলাম বলেন, লোন করে লাল তীর ভেবে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে দানা কিনেছি। চারা গজানোর পর তা লাগানোর কিছুদিনের মধ্যেই মরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি। ভেবেছিলাম পেঁয়াজ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব। এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেল।
পেঁয়াজের বীজ বিক্রেতা উপজেলার ধাওড়া গ্রামের জিলানী বলেন, পেঁয়াজের দানা কিনে আমরা বিক্রি করি। এবার কী কারণে এমন হলো, তা বলতে পারব না। এমন তো হওয়ার কথা না। এমন ঘটনার পর রবিবার ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিরা প্রতারক বীজ ব্যবসায়ীদের শাস্তি ও ক্ষতিপুরনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। শৈলকুপা থানা ও উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক চাষি বিক্ষোভ করে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসউজ্জামান খান বলেন, কিছু অসাধু পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিম্নমানের বীজ কিনে এনে তা কৃষকেদের কাছে বিক্রি করেছে। ফলে পেঁয়াজের চারা জমিতে লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যেই মরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার বীজ ব্যবসায়ী শৈলকুপার পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলামের লিফলেট সংগ্রহ করেছি। অতিদ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের মধ্যে শৈলকুপা উপজেলা অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারি এলাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে।