শেরপুরের প্রায় সব ইটভাটাই অবৈধ
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর পৌরসভার মোবারকপুর এলাকার আরএইচ ব্রিকস এর মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, শেরপুরের ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা চলমান। যে কোন মুহুর্তে সব ইট ভাটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।কোন ভাটারই বৈধ কাগজপএ নেই। তিনি আরো বলেন, শেরপুরে অর্ধেক ইটভাটা কাঠ ব্যবহার করে আর অর্ধেক ব্যবহার করে কাঠ এবং কয়লা।শেরপুরের সব ইট ভাটাই অবৈধ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শেরপুরে ইটভাটার সংখ্যা ছিল ৬৪টি। তার মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৩টি, যথাক্রমে শ্রীবর্দী জিগজ্যাগ ব্রিকস, মেসার্স হ্রদয় ব্রিকস এবং মেসার্স আর এস জিগজ্যাগ ব্রিকস। নয়টি ইটভাটা হাইকোর্টের নির্দেশে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫২টি ইটভাটার কোন কাগজপএই নেই । পরিবেশ অধিদপ্তর এই ইটভাটাগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
আরও জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলার ৬টি ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ২টি ইট ভাটা ভেঙ্গে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ২০২৩ সালের চলতি মাসের ১৮তারিখে ১৬টি ইট ভাটায় ৪১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তারপরেও থেমে নেই এই সব অবৈধ ইট ভাটার কর্মযজ্ঞ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সব অবৈধ ইটভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কয়লার বদলে কাঠ। শ্রমিক হিসেবে খাটানো হচ্ছে শিশু । যাদের বয়স ১০-১২। ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়। এক শ্রেণির দালাল কৃষকদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছে। দিন দিন উর্বর মাটি কমে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে কৃষি আবাদ।
কৃষি অফিস বলছে, দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বাজিতখিলা ইউনিয়নে অবস্থিত জিহান ব্রিকস্ বিসাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়ায় সেখানকার স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ১০০ একর ফসলি জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। এটা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা আন্দোলন করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয় নি। ক্ষতি পুরন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি কৃষকদের।পরে অনেক কৃষক তাদের সেই জমি কম মূল্যে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়।
কৃষক ছমিদুল জানান, এই জিহান ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারনে গত বছর আমাদের এলাকার সব কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গাছের কোন ফল ধরে না, কয়লার ধোয়ায় আমরা ঘড়ে থাকতে পারি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানান, জিহান বিকসে মালিক শেরপুরের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি, তার কাছে প্রশাসন কিছুই না। কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটা। ভাটার পাশেই রয়েছে একটি প্রাইমারী এবং হাইস্কুল এবং বাজার।
ইট ভাটার মালিক আব্দুল হাই বলেন, আমি ৩০থেকে ৩৫ বছর যাবৎ ইটের ব্যবসা করি। সরকার আমাদেরকে প্রনোদনা এবং পৃষ্টপোষকতা করলে সামনের বছর থেকেই আমরা পরিবেশবান্দব ইট তৈরিতে বিকল্প চিন্তা করবো।
ইউনিব্লক (কংক্রিটের ইট) উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান ফিউচার ব্লকের মালিক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আলামিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক ইঞ্চি মাটিকে উৎপাদনের আওতায় আনতে বলেছেন, সেটা বাদ দিয়ে আমরা কৃষিকে ধ্বংশের প্রতিযোগিতায় নেমেছি। আমাদের এখনি পুড়া মাটির ইট ব্যবহার না করে পরিবেশ বান্দব ইট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস এর শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক ও কবি রফিক মজিদ বলেন, পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধ ইটভাটা নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও এবং বার বার মোবাইল কোর্টে জরিমানা ও ভাটা ভেঙ্গে দেয়ার পরও কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটা এখনও সচল থাকে তা বোধগম্য নয়। তবে আমরা মনে করি এসব ইটাভাটা বন্ধের পাশাপাশি অধূনিক প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট ভাটার প্রতি সাধারণ মানুষ এবং ভাটা ব্যবসায়ীদের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে সচেনতা বাড়াতেও সরকারের কাজ করা উচিত।
শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মাহমুদ বলেন, যারা অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করবে না বা অনত্র সরিয়ে না নিবে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা মহাপরিচালক আমাদেরকে দিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপ পরিচালক এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল মাহমুদ বলেন, ইটভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ী ভাটা নির্মাণ না করলে সে গুলোকে ভেঙ্গে দেওয়া হবে এবং ভাটা মালিকদেরকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি তারা যেন আগামী বছর অন্য পরিবেশবান্ধব ইট প্রস্তুতুতের প্রস্তুতি নেয়।