যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা যেনো রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে – শেখ হাসিনা
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে গতকাল বুধবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, আগুন সন্ত্রাসকারীরা যেন আর রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং সজাগ থাকতে হবে ।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে আছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে সম্মান জানাচ্ছে। আমরা মানবতার জন্য কাজ করি। কিন্তু যারা মানবতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যারা এ দেশের মানুষকে গণহত্যা করেছে, মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, এই যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা যেন কোনো দিন আর বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। তার জন্য সবাইকে, সমস্ত বাংলাদেশের জনগণকে, যাঁরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস রাখেন, প্রতিটি মানুষের উন্নয়নে বিশ্বাস করেন তাঁরা সজাগ থাকবেন।’
বিকেল ৩টার কিছু আগে শুরু হওয়া সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্য শুরু করেন বিকেল ৪টা ৪১ মিনিটে। প্রায় ৪৫ মিনিটের ভাষণে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য, সেদিনের স্মৃতিচারণা, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের দুর্নীতি-সন্ত্রাসের সমালোচনা, আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন-অর্জন তুলে ধরেন। তিনি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তদের কোনো স্থান হতে পারে না। আমরা চাই ছাত্ররা, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ যত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে এবং অভিভাবক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ, তারা সকলেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সহায়তা করতে হবে যেন বাংলার মাটিতে আমরা এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্ত হওয়া থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করতে পারি। তাদের যেন সুস্থ জীবন দিতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইনশাআল্লাহ আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের বুকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অতি শিগগিরই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। আমরা মর্যাদার সঙ্গে চলব। জাতির পিতা আমাদের এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আবেদন কখনো শেষ হয় না। এই ভাষণে একদিকে জাতির পিতা যেমন স্বাধীনতার কথা বলেছেন, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে গিয়েছেন। তিনি যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে পা বাড়িয়েছিলেন, কাজ শুরু করেছিলেন তখনই তাঁকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। আজকে আমাদের দায়িত্ব তাঁর সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করে তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।’
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার প্রমুখ। সমাবেশে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। সমাবেশ পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
উল্লেখ্য, ইউনেসকোর বিশ্বস্বীকৃতি লাভের পর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের দিবস উদ্যাপন এবারই প্রথম।