মহাদেবপুরে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ব্যবসা জমজমাট

ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ: বছরের শুরুতেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সরকার থেকে বই দেয়া হলেও এক শ্রেণীর অসাধু শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রকাশনী কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন নিয়ে নোট, গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বুক লিষ্ট’ নামে একটি বইয়ের তালিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে বইয়ের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট, গাইড বইয়ে ছেয়ে গেছে বইয়ের দোকান। আর এমন দৃশ্য উপজেলা শহরের লাইব্রেরী পট্টিতে। আবার একই পরিবারে একাধিক ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করায় নোট, গাইড কিনাও সম্ভব হয়না অনেকের। ফলে পিছিয়ে পড়তে হয় তাদের। এনসিটিবি’র অনুমোদন ব্যতিত পাঠ্য তালিকায় কোন বই ব্যবহার করা যাবেনা । শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে গাইড বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চলছে এসব বইয়ের জমজমাট ব্যবসা । শহরের বাজার রোডে গড়ে ওঠা লাইব্রেরিতে এগুলো নিষিদ্ধ বই অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোন নজরদারি নেই। বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের গাইড বই কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তারা সন্তানদের সেসব বই কিনে দিচ্ছেন। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, শহরের বাজার রোডে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ লাইব্রেরী, ইসলামীয়া লাইব্রেরী, রিনা লাইব্রেরীসহ অন্যান্য লাইব্রেরী মালিকরা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত গাইড বই এবং এনসিটিবি’র অনুমোদনহীন বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজী ব্যাকরণ বিক্রি করছে। এসব লাইব্রেরীতে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণীর সংসদ, জননী, অনুপম, জুপিটার, ফুলকুড়ী প্লাসসহ, বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বই পাওয়া যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, মহাদেবপুর উপজেলার ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলে গঠন করা হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। সমিতিভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে অনুমোদনবিহীন গাইড বই, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজী ব্যাকরণ বই পড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার কাঞ্চন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট লাইব্রেরী থেকে নির্দিষ্ট প্রকাশনীর গাইড বই ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ময়নুল ইসলামের সাথে পরিচয় গোপন করে কথা বললে তিনি বলেন, পুঁথিনিলয় প্রকাশনির “সংসদ” গাইড বই ইসলামিয়া লাইব্রেরী থেকে ক্রয়ের জন্য ছাত্রীদের বলা হয়েছে। পরে পরিচয় প্রদান করে কথা বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জান নেই। পরিচয় গোপন করে উপজেলার সরস্বতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ এম আর শাদুজ্জামান এর সাথে অভিভাবক পরিচয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি “জননী” গাইড বই কেনার পরাপর্শ দেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, সমিতিতে গাইড বইয়ের ব্যাপারে কেন প্রকার আলোচনা হয়নি। এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের অনুমোদনবিহীন বই ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *