মহাদেবপুরে নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলও ছড়াচ্ছে সৌরভ
ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ: প্রকৃতির পালাবদলে শীতের শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দোলা দিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আম গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলও সৌরভ ছড়াচ্ছে। জানান দিচ্ছে মধুুমাসের। আমের মুকুলের মিষ্টি সুবাসে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। সেই সুমিষ্ট ঘ্রাণ আন্দোলিত করে তুলছে মানুষের মন। জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে থেকেই আম গাছে মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে তা আরো বাড়ছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় সব গাছে মুকুল আসতে শুরু করবে। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও আমচাষিরা এবার আমের বাম্পার ফলন আশা করছেন। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেধে আমচাষিরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। অবশ্য গাছে মুকুল আসার আগে থেকেই বাগান পরিচর্যা করছেন তারা। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এই উপজেলা ধানের রাজ্য বলে খ্যাত। কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে তেমন আগ্রহ না থাকলেও গত ৩-৪ বছরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২’শ ৬০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। বারি আম-৪, বারি আম-৫, আমরুপালি, ফজলি, খিড়সা, ল্যাংড়া, রাজভোগ ও গোপালভোগসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আমের বাগান করেছে কৃষকরা। ছোট পরিত্যাক্ত জমি এবং বাড়ীর আশে-পাশের জায়গাগুলোতে অনেক গাছ রয়েছে। অভিজ্ঞমহলের মতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমিডাক্লোরিড গ্রæপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রæপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডারী মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে। উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আমচাষি সাহাদাত হোসেন জানান, এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে গাছগুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল আসবে। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের আমচাষি তাহের উদ্দিন জানান, বছর জুড়ে বাগান পরিচর্যা করায় প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫-২০ দিন আগেই পুরো গাছ সাইপারম্যাক্সিন ও কার্বারিল গ্রæপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষক জাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যাবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম মফিদুল ইসলাম জানান, আম চাষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আম গাছে মুকুল আসার আগে এবং আমের গুটি হবার পর নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে আমসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।