দেশে জলাধার দখল করে ভরাট বন্ধের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
উন্নয়নের নামে দেশে জলাধার দখল করে ভরাট বন্ধের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের নামে আমরা দেখি প্রথমেই পুকুর ভরাট, খাল ভরাট বা নদী ভরাট হচ্ছে। দেখা যায়, যেখানে বিল ছিলো, সেখানে এমনভাবে ভরাট করা হয়, যে সেখানে আর কোনো পানিরই অস্তিত্ব থাকেনা। আগুন লাগলে পানিও পাওয়া যায় না। সবকিছু যেন গড়ে উঠেছে পানির উপরে। ‘
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পানি দিবস-২০১৮ উপলক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন ।
তিনি আরো বলেন, যত বেশি নগরায়ন হচ্ছে, মানুষের জীনযাত্রা বাড়ছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে ততবেশি সুপেয় পানির উত্স সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সকল ধরনের উন্নয়নেই পরিবেশের ওপর কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। এজন্য প্রকৃতি ও পরিবেশকে যথাসম্ভব সংরক্ষণ করে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়নের নামে পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ড. মো. মাহফুজুর রহমান।
নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো ওপর নির্ভরশীল নয়, নিজেদের ব্যবস্থাটা নিজেকেই করতে হবে। নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য যেমন ড্রেজিং করতে হবে, তেমনি বর্ষার পানি ধরে রাখারও বন্দোবস্তো রাখতে হবে। বর্ষকালে যে বিশাল জলরাশি আসে সেটা আমরা কিভাবে ধরে রাখতে পারি সেই পরিকল্পনা আগে থেকে নিতে হবে। আমি সবসময় মনে করি, ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়ে বর্ষাকালে যে পানিটা হিমালয় থেকে নেমে আসে সেটা যতটা বেশি আমরা সংরক্ষণ করতে পারবো ততবেশি আমাদের দেশের জন্য উপকার হবে। আমাদের কর্মপরিকল্পনায় পানি আরো বেশি করে কিভাবে ধরে রাখা যায় তার পরিকল্পনা নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখনো আমাদের দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়- নদী ড্রেজিংয়ে নয়, বরং নদীর পাড় বাধাই এবং রাস্তা নির্মাণ বা সেখানকার লোকজনের জন্য পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে। যেটি মূলত তাদের কাজ নয়। তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ নদী ড্রেজিং এবং পলি ব্যবস্থাপনা। রাস্তা সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় করে দেবে এবং সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা প্রণয়ণ এবং প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।
গঙ্গার পানি চুক্তির পরই তাঁর সরকার নদী খননের দিকে সব থেকে বেশি দৃষ্টি দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর পর কয়েকটি ড্রেজার কিনে জাতির পিতা এই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কখনো নদীগুলো খননের কোন উদ্যাগই গ্রহণ করেনি।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, নদীর নাব্যতা বাড়ানো যায়, নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এবং এই নদী আমাদের জন্য অভিশাপ নয়— আশির্বাদ হিসেবে যেনো নিজের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়াই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মূল দায়িত্বটা কি। নদী ভাঙ্গন রোধ করাও কিন্তু সব থেকে বড় কাজ।
আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টন নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমস্যা থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭শ’ নদী এবং ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। এই নদীগুলো হিমালয় থেকে এসেছে ভারত হয়ে। ভারতের সঙ্গে আমাদের এ নদীগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। যেটার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ভারতের কাছ থেকে এই গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পানির হিস্যা নিয়ে এখনো ঝামেলা চলছে। তিস্তা ব্যারেজ করলেও তাঁর ভবিষ্যত পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে চিন্তা করা হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যারেজটা করার আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল যে, আমরা ভাটির দেশে বসবাস করি। এখন সেই তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সমস্যা চলছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে নদী সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই অনেক কাজ করেছে। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠন করা হয়েছে, অন্যান্য নদী নিয়েও আলোচনা চলছে এবং তিস্তা নিয়েও আলোচনা চলছে।