চৌগাছায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উটেছে জুয়েলারী ব্যবসা।
রেজাউল ইসলাম, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥
বৃহত্তর যশোরের সীমান্তবর্তী চৌগাছা সদরসহ এলাকার বিভিন্ন বাজার প্রতিষ্ঠানে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গজিয়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়ে ইচ্ছামত চালাচ্ছে সোনার ব্যবসা।
ডিলিং লাইসেন্স ছাড়া গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ ও সরকার। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, চৌগাছা সদরে অন্তত ৭০টি জুয়েলারী ব্যবসায়ী দোকান রয়েছে। তন্মেধ্যে ডিলিং লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩০টি।
বাকি ৪০টি অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব জুয়েলারী মালিকেরা জমজমাটভাবে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চৌগাছা সদরের জুয়েলারী মালিক সমিতির সভাপতি অনন্ত সরকার ও সম্পাদক দেবু হোসেন দিদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা নাকি ডিলিং লাইসেন্স বাবদ বাৎসরিক ফিস জমা দিয়ে থাকে। বাকি অবৈধ জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রতি মাসে এরাও ২ থেকে ৩’শ টাকা কাষ্টমস কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে থাকে। যা অলিখিত চুক্তি মোতাবেক বলে সুত্র জানায়।
অপরদিকে এক শ্রেণীর অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সোনার খাদ মেশানোর মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনুমোদিত হারে সোনায় খাদ মেশানোর মাধ্যমে ব্যবসাটি তারা বেশ জমজমাটভাবে চালাচ্ছে। পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে ক্যারেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সূত্রগুলো এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে তথ্যটি। সমিতির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী জুয়েলারীগুলোতে তামার খাদের গ্রহণযোগ্য মাত্রা বেধে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী স্বর্ণালংকারের ক্যারেট নির্ধারিত হয়। ক্যারেটগুলো হচ্ছে ২৪,২৩,২২,২১,২০,১৮,১৬। এর মধ্যে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ হচ্ছে ফাইন গোল্ড অর্থাৎ খাটি সোনা। এসব স্বর্ণে পরবর্তীতে তামা মিশ্রিত করে স্বর্ণালংকার তৈরী করা হয়। দেশের স্বর্ণ বাজারে ৯ থেকে ২৫ ক্যারেট স্বর্ণ পাওয়া যায়। অথচ গ্রহণযোগ্য হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ ক্যারেটের বাজারে স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকারের গায়ে ২১ থেকে ২৩.৩ ক্যারেট এবং ৮৯৫ থেকে ৯’শ ৭০ লেখা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলোতে অনেকবেশি খাদ মেশানো থাকে।
বিশেষকরে চেইন, বল চেইন, লকেট, আংটি, নাকফুল, বাচ্চাদের আংটি এসব অলংকার সে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কম গ্রেড ও ক্যারেটের স্বর্ণ এনে বিভিন্ন স্বর্ণে অবৈধভাবে বেশি ক্যারেট সীল দেয়। ২২ ক্যারেট ফাইন্ডনেস সর্বনি¤œ ৯১৬ দশমিক ৬ সীল দিয়ে স্বর্ণ দেয়া হচ্ছে ১৮ ক্যারেট। ২২ ক্যারেট পরিমাণ থাকে মাত্র ৪ আনা।
একটি চক্র কম ক্যারেটের স্বর্ণ বাজার সয়লাব করে ক্রেতার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সূত্রটি আরো জানায়, কম ক্যারেটের স্বর্ণাংকার মধ্যপ্রাচ্য থেকে অবৈধভাবে এনে পাত যুক্ত করা হয়। এসব পাতে বেশি ক্যারেটের সীল দেওয়া হয়। সূত্র মতে ঐ পাতটি ক্যারেটের সাথে সীল থাকলেও বাকী স্বণের ক্যারেটের চেয়ে অনেক কম খাটি স্বর্ণ থাকে । যশোরসহ দেশের প্রায় জুয়েলারী দোকানে প্রতিদিনই এসব খাদ মেশানো স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে। এরা ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ মহলটি স্বর্ণের ক্যারেট যাচাই করতে চাইলে ঐ চক্রটি সাত পাচ দেখিয়ে ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেয়। স্বর্ণের মান যাচাইয়ের জন্য আমেরিকার তৈরি মিজার নামের ইলেকট্রনিক্স মেশিন থাকলেও অধিকাংশ জুয়েলারী মালিক তা ব্যবহার করে না। পুরানো আমলের এসিডে ডুবানোর ঝামেলাপুর্ণ প্রক্রিয়াটি চালু রেখেছে। ঘোষিত ক্যারেট অনুযায়ী স্বর্ণের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশিষ্ট প্রশাসন বিটিসিআই থাকলেও অদ্যবধি কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি তারা। স্বর্ণের ক্রেতারা পুনরায় স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে কম ক্যারেটের আসল রহস্য প্রকাশ পায়। এতে ক্রেতাদের ঠকতে হয়। এছাড়া টানা স্বর্ণ ব্যবহার করলে বরং এরও পরিবর্তন হয়ে যায়। এদিকে যশোর সীমান্তের একটি চক্র জেলার জুয়েলারীগুলোতে নামমাত্র মূল্যে তাদের তৈরী নাকফুল বেবী আংটি বা গিফট আইটেম সরবরাহ করে থাকে। আর এসকল জিনিস কিনে ক্রেতারা ব্যপকভাবে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে।
রেজাউল ইসলাম,
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি।