কথা রাখেনি মিয়ানমার, তুমব্রু সীমান্তে আরো বাড়িয়েছে সৈন্য সংখ্যা
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও কথা রাখেনি মিয়ানমার, উপরন্তু উপরন্তু সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়িয়ে আবারো উত্তেজনা ছড়াচ্ছে মিয়ানমার। রবিবার কাঁটাতারের বেড়ার কাছেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল দিয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনারা। এর আগে সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। গত শুক্রবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে কথা রাখেনি মিয়ানমার। উপরন্তু সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি’র কোনো জনবল বাড়ানো হয়নি। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তা।
প্রশাসন, বিজিবি ও স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযান ও হত্যাযজ্ঞের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু কোনাকখালের পাড়ে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে কয়েকবারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু তাদের যথাযথভাবে ফিরিয়ে না নিয়ে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। নানাভাবে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
গত বুধবার থেকে সীমান্তের তুমব্রু পয়েন্টে দফায় দফায় কমপক্ষে ১৫ পিকআপ ভ্যান সেনা-বিজিবি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার সকালেও সীমান্ত অঞ্চলে শতাধিক সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। পিকআপ ভ্যান এবং মোটরসাইকেলে করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনা-বিজিপি সদস্যরা। মিয়ানমার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা বলে তুমব্রু সীমান্তে কখনো সেনাসংখ্যা বাড়াচ্ছে আবার হঠাত্ করেই সংখ্যা কমিয়ে সেনাদের কাঁটাতারের বেড়ার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
তুমব্রু’র সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফরিদ এবং রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ নূর হোসেন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের সেনা সংখ্যা কমানো হলেও রবিবার সকালে আবারো বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি কাঁটাতারের বেড়ার কাছেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রহড়া দিচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শূন্যরেখার রোহিঙ্গা এবং তুমব্রু সীমান্ত অঞ্চলের মানুষেরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আব্দুল খালেক বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে সীমান্তে সেনা-বিজিপি’র টহল বাড়িয়েছে বলে মিয়ানমার আমাদের জানিয়েছে। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বিজিবি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমদ বলেন, শুক্রবার দু’দেশের পতাকা বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা দিয়েছিল মিয়ানমার প্রতিনিধিদল। কিন্তু মিয়ানমার সেনা সদস্যরা সীমান্ত সড়ক থেকে সরে গেলেও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের সর্জ্জিত যানবাহন চলাচল করছে ঠিকই। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনারা কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে বিজিপি ছদ্মবেশে সীমান্তে অবস্থান করতে পারে। কারণ তারা বার বার কথা দিয়ে কথা রাখছে না। সেহেতু তাদের কৌশলের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বিজিবি সদস্যদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।