এবার মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ

জাতিগত নিধনযজ্ঞের মাধ্যমে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করার পর এবার মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশে থেকে পালাচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। দেশটির ভারি অস্ত্র সজ্জিত সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে চীন সীমান্তের দিকে ছুটছে তারা। কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর নতুন করে সংঘাতের বাস্তবতায় এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

জাতিসংঘ বলছে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের পর এবার সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। এপ্রিলের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
কাচিন প্রদেশের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স অর্গানাইজেশন (কেআইও) ও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলে আসছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্বীকার করে বলছে, বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীদের দমন করা হচ্ছে। কাচিন এবং উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশ থেকে এই সংঘাতের কারণে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছে।

ব্যাংকক পোস্ট শনিবার জানায়, এই সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। সংঘাতকবলিত চীন সীমান্ত এলাকায় অনেকেই আটকা পড়ে আছে। সাহায্য সংস্থাগুলো ওই এলাকায় তাদের প্রবেশের সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ দফতরের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ক মার্ক কাটর্স বলেছেন, আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে, বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা। এদের মধ্যে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক, শিশু আর প্রতিবন্ধীরাও রয়েছেন। এসব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত ছয় বছরে মিয়ানমার সরকার অনেক আদিবাসী সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছে। তবে সুসজ্জিত কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্র“প হিসেবে বিবেচনা করা হয় কাচিনদের। কেআইও ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি ২০১১ সালে লঙ্ঘিত হলে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলে আসছে।

অধিকার গ্রুপগুলো বলছে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ রোহিঙ্গা সংকটের ওপর থাকার সুযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কাচিনদের ওপর তাদের অভিযান জোরালো করেছে। গত শুক্রবার ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাচিন অঞ্চলে লড়াই তীব্র হওয়ায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা সরকার ও সেনাবাহিনীকে বেসামরিক মানুষদের রক্ষা ও সংঘাতকবলিতদের মানবিক সহায়তা দেয়ার সুযোগ তৈরির আহ্বান জানাচ্ছি।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *