অতিরিক্ত হাত-পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি-সোয়েট

অতিরিক্ত হাত-পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি-সোয়েট

অতিরিক্ত হাত-পায়ের ঘাম নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি-সোয়েট

অনেকেরই হাত বা পা অতিরিক্ত ঘামার সমস্যা থাকে । এই সমস্যা নিয়ে বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তেও হয়। বিজ্ঞানে এর সঠিক ও পুরোপুরি কারণ এখনো জানা যায়নি। মনোদৈহিক বিভিন্ন কারণে শরীরের ঘর্মগ্রন্থি অতিপ্রতিক্রিয়া করলে এমনটা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা এ সমস্যার নাম দিয়েছেন ইডিওপ্যাথিক হাইপারহাইড্রোসিস। সমস্যাটির কারণ স্পষ্ট না হলেও এর একটি সফল চিকিৎসা হলো আয়ন্টোফোরেসিস পদ্ধতি।

মৃদু বিদ্যুৎ-প্রবাহের মাধ্যমে হাত বা পায়ের তালুর ভেতর দিয়ে বিশেষ কিছু আয়ন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে ১৯৩০-এর দশকে প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এরপর ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে এর সফল ব্যবহার হয়ে আসছে। পদ্ধতিটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে সমস্যাটির কোনো স্থায়ী সমাধানও নেই। এই পদ্ধতির ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরি হচ্ছে দেশেই।

আয়ন্টোফোরেসিস পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাম্মানিক অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী। ১৯৯২ সালের দিকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেজা বিন জায়েদের পরামর্শ নিয়ে আয়ন্টোফোরেসিস যন্ত্র তৈরি করেন তিনি। ডা. জায়েদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিএসএমএমইউ (তৎকালীন পিজি) এবং বারডেমে অতিরিক্ত হাত-পা ঘামা রোগীদের ওপর দুই বছর ধরে এ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ভালো ফলাফল পান। এই সফলতার পর ঘরে ব্যবহারের জন্য কম খরচে যন্ত্রটি বানাতে শুরু করেন সিদ্দিক-ই রব্বানী।

হাত-পা ঘামা নিয়ন্ত্রণের এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে অ্যান্টি-সোয়েট। সিদ্দিক-ই রব্বানী বলেন, ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিভাগের অধীনে গবেষণাগারে যন্ত্রটি উন্নত করা হয়। মাঝেমধ্যে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিনা মূল্যে জনসাধারণকে চিকিৎসা দেওয়া হতো। ২০১৩ সালে জনকল্যাণমূলক অংশীদারবিহীন প্রতিষ্ঠান বাই-বিট প্রতিষ্ঠা করার পর বাণিজ্যিকভাবে অ্যান্টি সোয়েট যন্ত্রটি রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

যেভাবে কাজ করে
অ্যান্টি সোয়েট যন্ত্রের সফলতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। জানালেন সিদ্দিক-ই রব্বানী। এই যন্ত্রে একই হাতের অর্ধেক অংশ থেকে বাকি অংশে মৃদু বিদ্যুৎ-প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ভয় নেই এতে কোনো বৈদ্যুতিক শক লাগার সম্ভাবনা নেই। প্রথমে এক হাতে ও পরে অন্য হাতে চিকিৎসা নেওয়ার এ ব্যবস্থায় রোগী নিজেই বিদ্যুৎ-প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পেসমেকার ব্যবহারকারীদের জন্যও যন্ত্রটি নিরাপদ বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক-ই রব্বানী।
অ্যান্টি সোয়েট যন্ত্রটি টানা কয়েক দিন কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করে চিকিৎসা নিতে হয়। যেহেতু অতিরিক্ত হাত-পা ঘামার কোনো স্থায়ী সমাধান এখনো নেই তাই এ পদ্ধতিতে পাঁচ-ছয় সপ্তাহ পর আবার ঘাম শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে আবার ২-৩ দিন এই চিকিৎসা নিলে আবার মাসখানেক ঘাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *