দেশে আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে

‘বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত একদশকেই অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ। ‘
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ‘নারী ও কন্যাশিশুদের খাদ্য পরিস্থিতি এবং খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন ।

বক্তারা আলো বলেছেন, দেশে খাদ্য উত্পাদনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে এবং দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তাসহ সরকারের বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরপরও বাংলাদেশে এখন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ বেড়েছে। যে কারণে নারীর পুষ্টিহীনতার হার হ্রাস আশাব্যঞ্জক নয়। সামাজিকভাবে নারীর প্রতি অধস্তন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও নারী ও কন্যা শিশুরা চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’-এর ভাইস-চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী রওশন আক্তার এবং সম্মানীয় অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল করীম এনডিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, একশন এইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবীর এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ-এর দেশীয় পরিচালক সাকেব নবী। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ- সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উত্পাদন থেকে শুরু করে খাদ্য টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায়।

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, সামাজিক প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো শুধু আইন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় এবং সচেতনতা। নারী ও কন্যা শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আচরণগত ও মানসিক পরিবর্তন অপরিহার্য।

কাজী রওশন আক্তার বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ১২টি জেলার ২৩টি উপজেলায় ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে এবং ডব্লিউএফপির সহায়তায় এই কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে।

আব্দুল করীম এনডিসি বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। খাদ্য অধিকার একটি মানবাধিকার, অন্যান্য মানবাধিকার নিশ্চিত করতে খাদ্য অধিকার সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খাদ্য অপচয় রোধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও উন্নয়নের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে পারে নারী ও শিশুসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা।

ফারাহ কবীর বলেন, নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য নিরসন ও মানসিকতা পরিবর্তন করতে না পারলে সমাজে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত থেকে যাবে। এ বিষয়ে মূলধারার মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণার উপর জোর দিতে হবে। সাকেব নবী বলেন, একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য মা ও কন্যা শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

মূল প্রবন্ধে ফুড সিকিউরিটি নিউট্রিশনাল সার্ভেলেন্স প্রোগ্রাম (এফএসএনএসপি)-এর জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশে বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতি কিশোরীর হার ৩২ শতাংশ, খর্বাকৃতি নারীর হার ৪২ শতাংশ, খাদ্যে কম পুষ্টি গ্রহণকারী নারীর হার ৬০ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদে শক্তির ঘাটতি আছে এমন নারীর হার ২৫ শতাংশ। এছাড়া দেশের ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *