২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে বিএনপির প্রত্যাখান
জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির নেতারা এ বাজেটকে ভোটের এবং লুটপাট করার বাজেট বলে অভিযোগ করেছে। পৃথক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারস্টার মওদুদ আহমদ ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমরা এই বাজেট প্রত্যাখান করছি। কারণ এই বাজেট জনগণের কোনও উপকারে আসবে না।
পল্টনে মৈত্রী মিলনায়তনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দলের পক্ষ থেকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের স্বার্থে নয় দাবি করে বলেন, নির্বাচনী বছরে ভোটের আকর্ষণের জন্য এত বড় ঘাটতির একটি বিশাল বাজেট দেয়া হয়েছে। মূলত জনগণকে প্রত্যারণা করে ভোটে আকর্ষণ করানোর জন্য এ বাজেট। তাই এটা নির্বাচনী বাজেট। ভোট আকর্ষণের বাজেট। জনগণের স্বার্থের বাজেট নয়। এছাড়া এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সক্ষমতাও নেই সরকারের, নেই প্রশাসনিক দক্ষতাও। সুতরাং এটা বাস্তায়নযোগ্য নয়। লোক দেখানো ও মানুষকে প্রতারণা করার বাজেট এটি।
তিনি বলেন,বর্তমান সরকার আজকে একটি বাজেট দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ বাজেট সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। বাজেটে মূল্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে, ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি হচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এই ঘাটতি, যেটা মূল বাজেটের চার শতাংশেরও বেশি। এই ঘাটতি বাজেট কেন দেয়া হয়েছে?
খন্দকার মোশাররফ বলেন, রাজস্ব, সরকারি খরচ ও সরকারি বেতন কমানো যায় না। কিন্তু এত বড় ঘাটতি বাজেট দেয়া যায়। আসলে এখানে উন্নয়নের জন্য সেই পরিমাণ কোনও টাকা-পয়সা নেই। এই ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হবে এবং আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়া হবে। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার টার্গেট ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ তারা (সরকার) আশা করছে, ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে ধারণা মাত্র। আজকে স্বৈরাচার সরকারের অর্থনৈতিক ভুল নীতির কারণে এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এই ব্যাংকগুলোকে যদি সরকারকে আবার ঋণ দিতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলো প্রাইভেট সেক্টরে কোনও ঋণ দিতে পারবে না।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ঋণের বোঝা বাড়িয়ে সরকার এত বড় ঘাটতি বাজটে দিয়েছে, এ বাজেট ঋণনির্ভর বাজেট। এতে জনগণের ওপর ঋণের বোঝা বৃদ্ধি হবে। এছাড়া রাজস্ব আদায়ের জন্য যে টার্গেট করা হয়েছে, সেটাও সম্ভব হবে না। জনগণের পকেট থেকেই এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে। বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে ধনীকে আরো ধনী করা এবং দেশের গরীব জনগোষ্ঠীকে আরও গরীব করা হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব এম. এম. আমিনুর রহমান।
পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ইট ইজ এ বিগ বিউটিফুল ব্লু বেলুন বাজেট। এই বাজেট হচ্ছে ‘একটি বিশাল সুন্দর নীল রঙের বেলুন।’ এর ভেতরে কিছুই নাই। এটা একটি গতানুগতিক বাজেট।
মওদুদ বলেন, ‘বাজেট গতানুগতিক, লোক দেখানোর, আপসকামিতার। গত বছরের ব্যর্থতা সরকার এ বাজেটে তুলে ধরেনি। বাজেট নিয়ে সরকারের দূরভিসন্ধি রয়েছে। বিশাল বাজেট হলেই বিশাল উন্নয়ন হয় না। এর মধ্যে বিরাট অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বাজেট। যে সরকার বাজেট দিয়েছে আমরা তাদের বৈধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছি। এই সরকারের বাজেট দেয়ার বৈধতা আছে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই সংসদে ১৫৪ জন নির্বাচিত হননি। একটি অনির্বাচিত সরকারের এই ধরনের বাজেট দেয়ার কী বৈধতা আছে এটা ইতিহাস একদিন পরীক্ষা করে দেখবে এবং তার রায় দিবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার যে বাজেট দিয়েছে তা যথেষ্ট হবে না উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনাদের ৯ বছরে যে অত্যাচার-জুলুম করেছেন তা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। এ বাজেট সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য হলে আপনারা দেশে যে বিশেষ বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন তার সমাধান দিতে পারতেন। ব্যাংক লুটসহ অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ও সামাজিক নৈরাজ্য বন্ধে এ বাজেটে কোনও দিকনির্দেশনা নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বাজেট দিয়েছেন। বাজেট বক্তৃতায় আপনারা যদি বলতেন আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ তাহলে আমরা বুঝতাম এটা সত্যিকারের জনকল্যাণের বাজেট।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে গুম-খুন হওয়া ৩০ টি পরিবারকে ঈদ উপহার ও ইফতার মাহফিল উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘অর্পণ বাংলাদেশ’নামের একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীথিকা বিনতে হোসাইন।
ইফতারে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টি (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিঙ্কন, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিজেপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ ও ডিএল’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যায় রাজধানীর শিশুকল্যাণ মিলনায়তনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’আন্দোলন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, এ বাজেট ধোকাবাজি আর লুটপাটের বাজেট। বর্তমান সরকার নির্বাচিত না, তারপরও এই সরকারের গুণ্ডামি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম মেনে নিতে হচ্ছে আমাদের। আজ যে বাজেট তথাকথিত অর্থমন্ত্রী পেশ করেছেন এটা সম্পূর্ণ ধোকাবাজির বাজেট অনৈতিক সরকারের লুটপাটের বাজেট।
তিনি বলেন, গত বছর প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার কম বাজেট ছিল। এবছর এটা বাড়িয়ে বৃহৎ বাজেটের নাম করে আসলে সরকার তাদের মূল লক্ষ্য লুটপাট হাসিল করতে চায়। এজন্য এ বাজেট সাধারণ মানুষের কাজে আসবে- এমনটি প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না।
দুদু বলেন, ‘এই সরকার ৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরু করেছিল। এখন সম্ভবত ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আসলে তাদের মূল লক্ষ্য হলো লুটপাট করা। এটা যখন (পদ্মা সেতু) শেষ হবে তখন কত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে তা বলা মুশকিল।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ওই ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাইনুল ইসলাম, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বগুড়া জেলা বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো.আনোয়ার প্রমুখ।